বৃহস্পতিবার, ৮ এপ্রিল, ২০২১

কারক গ্রহ সম্পর্কে কয়েকটি কথা এবং জ্যোতিষ শাস্ত্রে কারক গ্রহের ভূমিকা

কারক গ্রহ সম্পর্কে কয়েকটি কথা এবং জ্যোতিষ শাস্ত্রে কারক গ্রহের ভূমিকা

উদ্ভিদ অর্থাৎ একটি গাছের কারক গ্রহ কি হতে পারে ?

প্রাণিজগতের জীবনধারণের নিমিত্তে উদ্ভিদ হল প্রধান খাদ্যের উৎস বা বলা যায় খাদ্যশৃঙ্খলের খাদ্য-খাদক সম্পর্কের  ক্ষেত্রে প্রাণীসকলের জীবন উদ্ভিদের উপরই নির্ভরশীল l  উদ্ভিদের বেশ কয়েকটি অংশ আমরা দেখতে পাই l যেমন কান্ড  পাতা  ফুল, ফল, মূল বা শিকড় l

অনেক ক্ষেত্রই আপনি দেখবেন যে অনেকেই গাছের  কারক গ্রহ শুক্রকে ধরে l বলুন তো এটা ঠিক না ভুল ?

আপনি নিশ্চয়ই বলবেন ভুল --- কারণ গাছের কারক গ্রহ বৃহস্পতি l কিন্তু আমি বলবো  ---  কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমরা শুক্রকে সঙ্গে রাখতে পারি l কেন ও কখন পরে আসছি l

উদ্ভিদ বা গাছের মূল কারক গ্রহ বৃহস্পতি l

এবার যদি উদ্ভিদের অঙ্গবিভাগ দেখেন তাহলে কি দেখবেন  ---

ফুল মূলত উদ্ভিদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে অর্থাৎ কারক গ্রহ  শুক্র

ফল --- কারক গ্রহ বৃহস্পতি

কান্ড  --- কারক গ্রহ বৃহস্পতি

মূল --- কারক গ্রহ শনি

বীজ --- কেতু l এবারেই প্রশ্ন উঠবে সব গ্রহ ছেড়ে কেতু কেন ? কেতুর কারকতা মনে করুন আর বীজ - এর কার্য মিলিয়ে দেখুন "বীজের মধ্যে নিহিত ভবিষ্যতের একটি মহিরুহ"--- অর্থাৎ বীজ হল আধার স্বরূপ l

এবার আসা যাক পাতায়, পাতাকে গাছের রান্নাঘর বলা হয় l অর্থাৎ বেঁচে থাকার নিমিত্তে উদ্ভিদের সকল শক্তির উৎস পাতা --- কারক গ্রহ নিশ্চিতরূপে মঙ্গল হওয়াটাই স্বাভাবিক l পাতার মাধ্যমেই উদ্ভিদ তার প্রয়োজনের নিমিত্তে রেচন কার্য পরিচালিত করে l এক্ষেত্রে মঙ্গল ও বৃশ্চিক রাশির কারকতা মনে করুন l

যখন উদ্ভিদের স্বীয় জীবন ধরণের নিমিত্তে তার সম্পূর্ণ কর্মকান্ড কল্পনা করবেন, তখন বুধের একটি সংযোগ নিশ্চিত রূপেই স্বীকার করতে বাধ্য হবেন l

উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত আসবাবপত্রের ক্ষেত্রে আমরা কি দেখতে পাই ? 

আসবাবপত্র মূলত দ্বিতীয় ভাব ও স্থির রাশি হতে বিচার্য এবং উদ্ভিদের কারক গ্রহ বৃহস্পতি কিন্তু  আসবাবপত্র মৃত উদ্ভিদ থেকে তৈরি হয় l মৃত উদ্ভিদের কারক গ্রহ শনি অথচ আসবাবপত্রের মূল কারক গ্রহ হল শুক্র কারণ আসবাবপত্র অধিকাংশই দর্শনে চোখের তৃপ্তি দেয় বা সুন্দর - আকর্ষণীয় এবং জাগতিক সুখভোগের নিমিত্তে অত্যাবশকীয় সামগ্রী এবং অবস্থানও গৃহে l আসবাবপত্র আমাদের জীবনে অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রী কিন্তু যখন গৃহের আসবাবপত্রের সৌখিনতা জাতকের রুচি ও সামাজিক অবস্থাকে নির্দেশ করে তখন দ্বিতীয় ভাব স্বাপেক্ষে পঞ্চম ভাবের সংযোগ সহ চতুর্থ ভাব হতে আসবাবপত্রের বিচার করাটা সমীচীন  তবে দ্বিতীয় ভাবের স্পন্দন সর্বদাই অনেক জোরালো হবে l আশা করি চতুর্থ ভাব থেকে আসবাবপত্রের বিচারের কারণ অনুধাবন করতে পারলেন তবে বিচার্য চতুর্থ ভাব হতে আসবাবপত্রের বিচারের ক্ষেত্রে শুক্রের সংযোগের সহিত স্থির রাশির সংযোগটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ  কারণ স্থির রাশির জায়গায় চর রাশি হলে বাহন বা গাড়ি নির্দেশ করবে এবং দ্বাত্মক রাশি হলে দোলনা জাতীয় আসবাবপত্র নির্দেশ করবে l 

আসা যাক পতঙ্গভুক উদ্ভিদ সম্পর্কে --- পতঙ্গভুক অর্থে insects বা ছোটছোট কীটপতঙ্গকে খাদ্য হিসাবে এই জাতীয় উদ্ভিদ গ্রহণ করে অর্থাৎ মাংসাশী, স্বভাবতই মঙ্গলের একটি সংযোগ বৃহস্পতির সহিত থাকাটাই স্বাভাবিক l

বনসাই এর ক্ষেত্রে কৃত্রিম উপায়ে উদ্ভিদকে অতি ছোট রূপ দেওয়া হয় l অর্থাৎ 3+8+বৃহস্পতি- শুক্র -কেতু 

3+8+বৃহস্পতি বোঝা গেলো কিন্তু এখানে শুক্র কেন ? --- এই উত্তরটি না হয় আপনাদের জন্যেই রইলো...



শনি গ্রহের ক্ষেত্রে যেমন তিনটি বলয় পরিলক্ষিত হয় অনুরূপে শনির জাতকের ট্রাজিক জীবনের ক্ষেত্রে ত্যাগ, তিতিক্ষা ও দুঃখ হলো তিনটি বলয় স্বরূপ  ---

শনি রাশিচক্রে  --- শুভ বা অশুভ বা শুভাশুভ যে ধরণের ফলদাতাই হোক না কেন, উপরিউক্ত বৈশিষ্টাবলি অবশ্যই পরিলক্ষিত হবে...

শনি একমাত্র গ্রহ --- যার জাতক সমাজের নিম্নস্তর থেকে সর্বোচ্চস্তর সর্বত্রই পরিলক্ষিত হয় (  ভিক্ষুক থেকে উচ্চ স্তরের যোগী সর্বত্রই শনির প্রভাব বর্তমান  ---  তবে তা শনির অশুভত্ব বা শুভত্বের উপর নির্ভরশীল )


 *** আর শনির জাতক অর্থে শনি যদি লগ্নবিন্দুর সহিত প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কিত হয় এবং শুভাশুভ ফল নির্ভর করে শনির নির্দেশনামা ও শনির সহিত সম্পর্কিত গ্রহসকলের নির্দেশনামার শুভাশুভত্বের উপর...


লগ্ন ভাবের সহিত শনির সংযোগের ফলাফল

লগ্নভাবের উপর শুভ শনির প্রভাবে জাতক ধৈর্যশীল, অধ্যবসায়ী, মিতাচারী, শান্ত, ধীরস্হির হয় l এদের মধ্যে একনিষ্ঠতা, আত্মমগ্ন, একাগ্রচিত্ত, একটানা পরিশ্রম করার ক্ষমতা, কোনও কিছুতে লেগেপড়ে থাকার ক্ষমতা, সাবধানতা, নিয়মনিষ্ঠ, সততা, শৃঙ্খলাপরায়ণতা, আত্মসংযমশীলতা, দ্বায়িত্ব- কর্তব্যপরায়ণতা লক্ষ্য করা যায় l এদের মধ্যে ভোগবাসনার আকাঙ্খা কম হওয়ায় জাতক রক্ষনশীল, সঞ্চয়ী মনোভাবাপন্ন, দার্শনিক চেতনাসম্পন্ন, আধ্যাত্বিক মার্গের জ্ঞানী, তপস্বী বা সন্নাসীও হতে পারে l এরা ধর্মের অনুশাসন ও সংস্কার মেনে চলে l

সাধারণত শনির প্রভাবে জাতক জাতিকা শ্রমশীল, গোপনীয়তাপ্রিয়, একটু অলস, কুঁড়ে, নিসঃঙ্গতাপ্রিয়, একাকিত্ব - নিরাবতাপ্রিয়, গতানুগতিক অপরিবর্তনীয় জীবনে বিশ্বাসী, পুরানো বিষয় ভুলতে না পারা, একই মত ও পথের বিশ্বাসী, ত্যাগমূলক মানসিকতা সম্পন্ন হয় l

শনি পাপগ্রহ রূপে কল্পিত হওয়ায় অশুভ ফলের মাত্রাই বেশি হয় - সেই কারণে লগ্নভাবের সহিত সম্পর্কযুক্ত অশুভ বা পীড়িত শনির প্রভাবে জাতকের প্রতিকূল জীবনযাত্রা, দুঃখকষ্ট, বাধাবিঘ্ন, চরম দুর্দশাগ্রস্থ অবস্থা নির্দেশ করে l এরা পরাধীনতার মধ্যে থাকতে ভালোবাসে বা অন্যের আদেশ নির্দেশ মেনে চলে l এদের হৃদয়ে রসের উৎস শুস্ক, জীবনের আনন্দ, ভোগ আকাঙ্খা বিশেষ থাকে না l কল্পনার কোনও স্থান এদের মধ্যে নেই - চরম বাস্তবকেই মেনে নেয়, কিছুটা জড়সড় প্রকৃতির হয় l নতুনত্বকে গ্রহণ করতে পারে না l এদের মধ্যে বিশেষ আশা-আকাঙ্খা থাকে না --- অল্পেই সন্তুষ্ট থাকে l অন্যের প্রতি নির্ভরশীল থাকে, উদাসীন, আবেগহীন, অসতর্ক হয় l এদের মনের মধ্যে হতাশা, নৈরাশ্য, বিষাদ, নিরানন্দময় অবস্থা, অসন্তোষ, পরনিন্দা-পরচর্চা করা, অন্যের ভালো না চাওয়া, সবকিছু ধীরগতিতে সম্পন্ন করা, অবসাদ, অলসতা, গাধার খাটুনির কাজ করা, স্বার্থপরতা, হিংসা, কুটিলতা, অনিশ্চয়তা, ভয়, অসাফল্য, নিরুৎসাহ, উত্তেজনাহীন, স্থূলবুদ্ধি, স্বাভাবিক বোধবুদ্ধি কম থাকে, বোকামি, নির্বুদ্ধিতা, মূর্খ, বোবা, অন্ধ, পঙ্গু, ক্লীব, জড়ভাবাপন্ন, সহজাত চিন্তাভাবনাহীন হয়ে থাকে l জীবনে বিশেষ সুযোগ আসে না, সব ব্যাপারে একটা বাধা কাজ করে l

লগ্নভাবের সহিত অশুভ শনি সম্পর্কিত হলে শনির প্রভাবে দীর্ঘ রোগাটে গড়ন, রুগ্ন অপুষ্ট লাবণ্যহীন চেহারা, ত্রুটিযুক্ত শারীরিক গঠন, শিরা ও হাড় বের করা স্বাস্থহীন চেহারা, বিষাদক্লিষ্ট লাবণ্যহীন অথবা কুৎসিত মুখমন্ডল, কালো ফ্যাকাসে গাত্রবর্ণ, কোটরাগত চক্ষু, অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো রোগা ও লম্বা, বয়সের তুলনায় এদের বেশি বৃদ্ধ দেখায় l এই ধরণের শারীরিক গঠনের লোকেদের অন্যেরা বিশেষ সন্মান ও গুরুত্ব দেয় না l শারীরিক অভিব্যক্তিতে কোনও আকর্ষণ থাকে না l জাতক অপরিছন্ন থাকতে ভালোবাসে l

 *** উপরিউক্ত ফলাফল ভাবের সহিত গ্রহের সাধারণ ফলাফল বিশেষত জ্যোতিষ শাস্ত্রের শিক্ষার্থীদের জন্যে আলোচিত l প্রিয় পাঠকবর্গ অনুগ্রহ করে উপরিউক্ত বৈশিষ্ট সমূহকে চূড়ান্ত বলে বিবেচনা করবেন না কারণ ফলাফল সঠিক ভাবে অঙ্কিত সম্পূর্ণ রাশিচক্রের গ্রহদের সহিত সম্পর্কিত অন্যান্য গ্রহ, ভাব ও রাশির বৈশিষ্ট্যর সমন্বয়ে নির্ধারিত হয় l কেবলমাত্র কোনো একটি ভাবস্থ বা রাশিতে অবস্থিত গ্রহের সাধারণ ফল ফলাদেশের অংশবিশেষ হলেও সম্পূর্ণ ফল নয় অর্থাৎ বিষয়টি সহজেই অনুমেয় যে "আমার ক্ষেত্রে আংশিক মিললো বা আমার তো কিছুই মিললো না" --- এ প্রসঙ্গে এই ধরণের উক্তি অপ্রাসঙ্গিক বা অপ্রয়োজনীয় l

একই রাশিতে একই বিন্দুতে অবস্থিত একটি গ্রহ তাহার সহিত সম্পর্কিত অন্যান্য গ্রহের ও ভাবের সমন্বয়ে ( অন্যান্য গ্রহের অবস্থান বা ভাবসকল পরিবর্তিত হলে ) বা একটি ভাবে বিভিন্ন বিন্দুতে অবস্থিত একটি গ্রহের (অন্যান্য গ্রহ ও ভাবের অবস্থান অপরিবর্তিত থাকলেও )  সম্ভাব্য ফলের পরিবর্তন অসংখ্য হতে পারে ... সুতরাং রাশিচক্রে একই ভাবে বা একই রাশিতে একটি গ্রহ অবস্থান করলেও প্রত্যেক জাতক জাতিকার উক্ত গ্রহ সম্পর্কিত বৈশিষ্টবলীর বা ফলের তারতম্য হওয়াটাই স্বাভাবিক l

উদাহরণ স্বরূপ ধরা যাক একশত জাতক জাতিকার লগ্নে শনি অবস্থিত, তাহলে সকলের ক্ষেত্রে শনি কি একই ফল দেবে ?

না --- সাধারণ কিছু বৈশিষ্ট্যগত মিল থাকলেও, শনির ভাববিন্দুগত অবস্থান বা রাশিগত অবস্থানের তারতম্য এবং শনির সহিত সম্পর্কিত অন্যান্য গ্রহ ও ভাবের সম্পর্কের পার্থক্য হেতু প্রতিটি জাতক জাতিকার ক্ষেত্রে শনি প্রদেয় ফলের পার্থক্য থাকবেই ...




This is one of the stage of how to learn Vedic and Modified KP Astrology.

If you want to know more about Astrology lesson ---

Please comments and to get early notifications --- follow and share this article.



কোন মন্তব্য নেই: